৩১ দফা সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমেই ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্রের জবাব দেওয়া হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, তাদের কায়দায় আমরা জবাব দেব না। আমরা মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে তাদের জবাব দেব।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) টাঙ্গাইল জেলা এবং গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির ৩১ দফা কর্মশালায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে দেওয়া বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতে ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি বাড়াতে বুধবার টাঙ্গাইল জেলা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর মহানগরের নেতাদের নিয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করে বিএনপি। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে এতে তৃণমূলের নেতাদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
সমাপনী বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, আগামীর নির্বাচন সবার জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ। বিএনপির প্রতি দেশের মানুষের আস্থা রয়েছে। এই আস্থাকে ধরে রাখতে হলে বিএনপিকেও মানুষের কাছে যেতে হবে। তাদের আশা আকাঙ্খা বুঝতে হবে।
তারেক রহমান বলেন,‘ আগামীর ভোটই শুধু ভোট না। অনেকে বলে, তারেক রহমান শুধু ভোট ভোট করে। আমরা রাজনৈতিক দল, আমরা তো ভোটের কথাই বলব। আগামীর নির্বাচন করেই কী আপনি ক্ষান্ত দিয়ে দেবেন? মানুষ জানতে চায় আমরা কী করব। এখন শুধু কথায় চিড়া ভিজবে না। জনগণকে জবাব দিতে হবে। তাদের আস্থা ধরে রাখতে হবে। নির্বাচিত হলে সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। কারণ পরবর্তী নির্বাচনের আগে জনগণকে দেখাতে হবে আপনি কী কী করতে পেরেছেন। সবটা হয়তো আমরা পারব না, তবে যতটুকু করব তা জনগণের কাছে তুলে ধরব। তখন জনগণ এর বিচার করবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের বহু সহকর্মী খুন হয়েছেন। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে আমাদের পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী খুন হয়েছেন। আর কোনো রাজনৈতিক দলের এত মানুষ মারা গেছে কি না, জানি না আমরা। গত ১৬ বছরে আমাদের দলের বহু নেতাকর্মীর বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে বললে আমার ওপর নির্যাতন হয়েছে। আমরা বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। আমার মাকে নির্যাতন করা হয়েছে। আমার ভাই তাদের অত্যাচারে মারা গেছে। আমরা এই নির্যাতনের জবাব যদি তাদের মতো দিই, তাহলে তো হবে না। তারা অধম বলে আমরা অধম হবো নাকি? আমরা এর জবাব ৩১ দফা সফল করার মাধ্যমে দেব। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই তাদের জবাব দেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘এখানে যারাই আছেন প্রত্যেকের নামে একটি হলেও গায়েবি মামলা রয়েছে। এত নির্যাতন সহ্য করে জেল খেটেছেন আপনারা, কষ্ট করেছেন। কেন আপনারা এমন কাউকে সুযোগ দেবেন যে আপনাদের সব কষ্টে পানি ঢেলে দেবে? কিছু লোক তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য আমাদের সব কষ্টে পানি ঢেলে দিচ্ছে। কেন তাদের সেই সুযোগ দেবেন আপনারা?’
তারেক রহমান বলেন, ‘মানুষ বিএনপির দিকে তাকিয়ে আছে। আপনাদেরও জনগণের দিকে তাকাতে হবে। আপনাদেরও বুঝতে হবে কী করলে জনগণ আপনাকে আরও পছন্দ করবে। আপনার অধীনে অনেক নেতাকর্মী থাকবে। তাদের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। পরিবারের দুষ্টু বাচ্চাদের যেমন টাইট দিয়ে রাখতে হয়, তেমনি দলের ভেতরও দুষ্টুরা আছে, থাকতে পারে। আমাদের এই দুষ্টুদের টাইট দিয়ে রাখতে হবে। তারা হয়তো দলের অনেক ক্ষতি করে ফেলছে।’
তিনি বলেন, ‘আপনাদের মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে। জনগণের আস্থা ধরে রাখতে হবে। এই আস্থা ধরে রাখার দায়িত্ব আপনার। এটি জনগণের দায়িত্ব না। আমরা নিজেদের সংযত রাখব এবং আমাদের সহকর্মীদের সংযত রাখতে চেষ্টা করব। মানুষ চায় না এমন কাজ কেন আপনি করবেন, যেখানে আপনাদের আস্থার সংকট দেখা দেবে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘স্বৈরাচার যখন জনগণকে অধিকারবঞ্চিত করে অস্ত্রের মুখে ক্ষমতা ধরে রেখেছিল, তখন আমি বলেছিলাম ‘‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’’। এর অর্থ হলো, জনগণের বাক্-স্বাধীনতা ও জনগণের অর্থনৈতিক অধিকার জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া। বাংলাদেশে কী হবে, তা বাংলাদেশের মানুষ ঠিক করবে। ‘‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’’-এর প্রথম লক্ষ্য দেশের মানুষের সহযোগিতায় দেশের গণতন্ত্রকামী দলগুলো স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছে। স্বৈরাচারের মাথা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। গত ১৬ বছর তারা নিজেদের আখের গোছাতে ভিনদেশে তাদের প্রভুকে খুশি করতে দেশের সবকিছু ধ্বংস করে দিয়ে গেছে।’